-->

Breaking

শনিবার, ৩১ মে, ২০২৫

মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন - Mahatma Gandhi

 মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন: একটি বিশদ পর্যালোচনা


 ভূমিকা-     

মহাত্মা গান্ধী, যিনি "জাতির জনক" নামে পরিচিত, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে এক অনন্য স্থান অধিকার করেন। তাঁর অহিংসা ও সত্যাগ্রহের নীতির মাধ্যমে তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলেন। নিচে তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত প্রধান আন্দোলনগুলি বিশদভাবে আলোচনা করা হলো। 




6

১. চম্পারণ সত্যাগ্রহ (১৯১৭)

স্থান: চম্পারণ, বিহার

কারণ: ব্রিটিশদের দ্বারা কৃষকদের উপর জোরপূর্বক নীল চাষের চাপ ও শোষণ।

বিবরণ: গান্ধীজী রাজকুমার শুক্লার আমন্ত্রণে চম্পারণে আসেন এবং কৃষকদের দুর্দশা প্রত্যক্ষ করেন। তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদ শুরু করেন এবং কৃষকদের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন গড়ে তোলেন।

ফলাফল: ব্রিটিশ সরকার কৃষকদের শর্ত শিথিল করতে বাধ্য হয় এবং নীল চাষের বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়।






২. খেদা সত্যাগ্রহ (১৯১৮)

স্থান: খেদা, গুজরাট

কারণ: খরা ও মহামারীর কারণে কৃষকদের ফসল নষ্ট হয়, তবুও ব্রিটিশ সরকার কর আদায়ে অনড় থাকে।

বিবরণ: গান্ধীজী ও সরদার বল্লভভাই প্যাটেলের নেতৃত্বে কৃষকরা কর প্রদান বন্ধ করে দেন এবং অহিংস আন্দোলন শুরু করেন।

ফলাফল: ব্রিটিশ সরকার কর আদায় স্থগিত করতে বাধ্য হয় এবং কৃষকদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করে।




৩. আহমেদাবাদ মিল ধর্মঘট (১৯১৮)

স্থান: আহমেদাবাদ, গুজরাট

কারণ: মিল শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও কাজের শর্তাবলী উন্নয়নের দাবি।

বিবরণ: গান্ধীজী শ্রমিকদের পক্ষ নিয়ে মিল মালিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন এবং শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় অনশন শুরু করেন।

ফলাফল: মিল মালিকরা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও কাজের শর্তাবলী উন্নয়নে সম্মত হন।




৪. রাওলাট আইন বিরোধী আন্দোলন (১৯১৯)

কারণ: রাওলাট আইন দ্বারা ব্রিটিশ সরকার বিনা বিচারে গ্রেফতার ও আটক রাখার ক্ষমতা পায়।

বিবরণ: গান্ধীজী দেশব্যাপী এই আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও ধর্মঘটের আহ্বান জানান।

ফলাফল: এই আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি হয় এবং জনগণের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।





৫. অসহযোগ আন্দোলন (১৯২০-১৯২২)

কারণ: জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ও খিলাফত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগের আহ্বান।

বিবরণ: গান্ধীজী জনগণকে ব্রিটিশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আদালত, চাকরি ও পণ্য বর্জনের আহ্বান জানান।

ফলাফল: চৌরি চৌরা হিংসাত্মক ঘটনার পর গান্ধীজী আন্দোলন প্রত্যাহার করেন, তবে এটি জনগণের মধ্যে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা জাগিয়ে তোলে।


৬. সিভিল অবাধ্যতা আন্দোলন ও দাণ্ডি অভিযান (১৯৩০)

কারণ: ব্রিটিশ সরকারের লবণ আইন ও করের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। 

বিবরণ: গান্ধীজী ৭৮ জন অনুসারীসহ ২৪ দিন ধরে ২৪০ মাইল হেঁটে দাণ্ডি গমন করেন এবং সেখানে লবণ তৈরি করে আইন ভঙ্গ করেন।ফলাফল: এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র গণআন্দোলন শুরু হয়।


৭. ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২)

কারণ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকারের ভারতীয়দের মতামত উপেক্ষা করে যুদ্ধ ঘোষণা।বিবরণ: গান্ধীজী "করো বা মরো" স্লোগান দিয়ে ব্রিটিশদের ভারত ছাড়ার আহ্বান জানান।ফলাফল: ব্রিটিশ সরকার কঠোরভাবে আন্দোলন দমন করে, তবে এটি ভারতের স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত প্রেরণা যোগায়।





উপসংহার

মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে পরিচালিত এই আন্দোলনগুলি ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাঁর অহিংসা, সত্যাগ্রহ ও আত্মত্যাগের নীতিগুলি আজও বিশ্বব্যাপী অনুপ্রেরণা হিসেবে বিবেচিত হয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন