গণতন্ত্র কী? কিভাবে এলো? – ভারতীয় প্রেক্ষাপটে একটি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা
ভূমিকা
গণতন্ত্র (Democracy) শব্দটি গ্রিক শব্দ ‘Demos’ (জনগণ) ও ‘Kratos’ (ক্ষমতা) থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ “জনগণের শাসন”। এটি এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকার গঠন ও নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ করে। ভারত বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র, যেখানে ১৪০ কোটিরও বেশি মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। এই নিবন্ধে আমরা গণতন্ত্রের উৎপত্তি, বিবর্তন, এবং ভারতীয় প্রেক্ষাপটে এর প্রয়োগ বিশদভাবে আলোচনা করব।
গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ও মূলনীতি
জনগণই সার্বভৌম (Sovereignty lies with the people)।
নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন (Representative Governance)।
মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা সংরক্ষিত (Fundamental Rights)।
সরকারের তিনটি অঙ্গের স্বাধীনতা (Executive, Legislature, Judiciary)।
২. গণতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য
বহুদলীয় ব্যবস্থা (Multi-party System)
সংবিধানের প্রাধান্য (Rule of Law)
স্বাধীন বিচারব্যবস্থা (Independent Judiciary)
মিডিয়া ও নাগরিক সমাজের স্বাধীনতা (Free Press & Civil Society)
৩. গণতন্ত্রের ঐতিহাসিক বিবর্তন
১. প্রাচীন গণতন্ত্র
রোমান রিপাবলিক (খ্রিস্টপূর্ব ৫০৯) – প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থার সূচনা।
২. আধুনিক গণতন্ত্রের উত্থান
গ্লোরিয়াস রেভোলিউশন, ১৬৮৮ (ইংল্যান্ড) – সংসদীয় গণতন্ত্রের ভিত্তি।
আমেরিকান বিপ্লব (১৭৭৬) ও ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯) – “জনগণের শাসন” ধারণা প্রতিষ্ঠা করে।
৩. ভারতে গণতন্ত্রের আগমন
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের দাবি – স্বায়ত্তশাসন ও গণতান্ত্রিক অধিকার।
১৯৩৫-এর ভারত শাসন আইন – প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের সূচনা।
ভারতীয় গণতন্ত্রের কাঠামো
১. ভারতের সংবিধান ও গণতন্ত্র
প্রস্তাবনা – “আমরা ভারতের জনগণ…” দ্বারা গণতান্ত্রিক চেতনা প্রতিফলিত।
মৌলিক অধিকার (আর্টিকেল ১২-৩৫) ও রাষ্ট্রীয় নীতি নির্দেশক (আর্টিকেল ৩৬-৫১) গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে।
২. ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থা
ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) – ভোটারদের সুবিধা ও স্বচ্ছতা।
বৃহত্তম গণতন্ত্র – ৯০ কোটি ভোটার (২০২৪ অনুযায়ী)।
৩. সরকারের তিনটি অঙ্গ
আইনসভা-- সংসদ (লোকসভা ও রাজ্যসভা) – আইন প্রণয়ন।
কার্যনির্বাহী-- রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিপরিষদ – শাসনকার্য পরিচালনা।
বিচারব্যবস্থা---সুপ্রিম কোর্ট ও হাইকোর্ট – সংবিধানের ব্যাখ্যা ও নাগরিক অধিকার রক্ষা।
ভারতীয় গণতন্ত্রের চ্যালেঞ্জ
১. দুর্নীতি ও অপরাধী রাজনীতি
লোকপাল বিল – দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা, কিন্তু কার্যকর বাস্তবায়নের অভাব।
২. সাম্প্রদায়িকতা ও জাতিভেদ
জিএসটি ও কৃষি আইনের মতো সংস্কারে কৃষকদের অসন্তোষ (২০২০-২১ কৃষক আন্দোলন)।
৩. অর্থনৈতিক বৈষম্য
বেকারত্বের হার ২০২৪-এ ৮.১% (PLFS রিপোর্ট)।
গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ: ভারতে সম্ভাবনা
নারী ও যুবকদের অংশগ্রহণ – ২০২৪-এ ১৪৬ নারী এমপি (লোকসভায়)।
সুপ্রিম কোর্টের অগ্রগতি – সমলিঙ্গ বিবাহ, আদিবাসী অধিকারের রায়।
উপসংহার
ভারতের গণতন্ত্র একটি জীবন্ত ও গতিশীল ব্যবস্থা, যা সময়ের সাথে নিজেকে সংস্কার করে চলেছে। যদিও দুর্নীতি, বৈষম্য ও রাজনৈতিক হিংসা এর জন্য চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবুও সংবিধান, স্বাধীন প্রতিষ্ঠান ও জনগণের সচেতনতা এটিকে টিকিয়ে রেখেছে। ভবিষ্যতে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রযুক্তিনির্ভর গণতন্ত্রের দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব।
FAQs (প্রশ্নোত্তর)
➔ ২৬ জানুয়ারি ১৯৫০ (সংবিধান কার্যকর হওয়ার দিন)।
Q2. ভারতে প্রথম সাধারণ নির্বাচন কবে হয়?
➔ ১৯৫১-৫২ (জওহরলাল নেহেরু প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন)।
Q3. ভারতের গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শক্তি কী?
➔ বিবিধতার মধ্যে ঐক্য – বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ একসাথে বসবাস করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন