-->

Breaking

শুক্রবার, ৩০ মে, ২০২৫

ভারতের মহাকাশ গবেষণা ইতিহাস -- India space research

 ভারতের মহাকাশ গবেষণা ইতিহাস এক গর্বের অধ্যায়, যা শুরু হয়েছিল একান্তই সীমিত সম্পদ ও অবকাঠামো নিয়ে, কিন্তু আজ তা পৌঁছে গেছে চাঁদের বুকে, মঙ্গলের কক্ষে, এমনকি ভবিষ্যতে সৌরজগতের বাইরেও পথ খুঁজছে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ISRO) কেবলমাত্র একটি বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠান নয়; এটি কোটি কোটি ভারতবাসীর স্বপ্নের প্রতীক। এই দীর্ঘ যাত্রায় বিভিন্ন বছর ও দিন গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। নিচে ভারতের মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসের সেই সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলি ধারাবাহিকভাবে বিশদে তুলে ধরা হলো।



১৯৬২ – সূচনা পর্ব

ভারতের মহাকাশ গবেষণার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয় ১৯৬২ সালে, যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু ভারতীয় বিজ্ঞানী ডঃ বিক্রম সারাভাইয়ের নেতৃত্বে একটি মহাকাশ গবেষণা কমিটি গঠন করেন। তখন থেকেই ভারতের মহাকাশ অভিযানের পরিকল্পনা শুরু হয়।


১৯৬৩ – প্রথম রকেট উৎক্ষেপণ

২১ নভেম্বর, ১৯৬৩: থুম্বা ইকুয়েটোরিয়াল রকেট লঞ্চিং স্টেশন (TERLS) থেকে প্রথমবারের মতো একটি নাইকি-অ্যাপাচি রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়। এই উৎক্ষেপণ ছিল ভারতের মহাকাশ অভিযানের সূচনালগ্ন।


১৯৬৯ – ISRO-এর প্রতিষ্ঠা

১৫ আগস্ট, ১৯৬৯: Indian Space Research Organisation (ISRO) প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এটি মহাকাশ গবেষণায় স্বাধীন ভারতের সংগঠিত প্রয়াসের রূপ দেয়। ডঃ বিক্রম সারাভাই ছিলেন এর প্রধান উদ্যোক্তা।

১৯৭৫ – প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘আর্যভট্ট’

১৯ এপ্রিল, ১৯৭৫: ভারত তার প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ ‘আর্যভট্ট’ উৎক্ষেপণ করে, যা রাশিয়ার সহযোগিতায় উৎক্ষেপিত হয়। এই স্যাটেলাইট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ভারতের আত্মনির্ভরতার সূচক হয়ে ওঠে।

১৯৮০ – SLV-3 ও ‘রোহিণী’ স্যাটেলাইট

১৮ জুলাই, ১৯৮০: ISRO নিজস্ব উৎক্ষেপণ যান SLV-3-এর মাধ্যমে প্রথম স্যাটেলাইট ‘রোহিণী-১’ উৎক্ষেপণ করে। এটি ভারতকে বিশ্বের গুটিকয়েক উৎক্ষেপণকারী দেশের তালিকায় স্থান দেয়।

১৯৮৪ – প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী

৩ এপ্রিল, ১৯৮৪: উইং কমান্ডার রাকেশ শর্মা রাশিয়ার Soyuz T-11 মহাকাশযানে চড়ে মহাকাশে যান। তিনি ভারতীয় হিসেবে প্রথম মহাকাশচারী এবং তাঁর কথাটি আজও স্মরণীয় — “India looks from space... Saare Jahan Se Achha।”

১৯৯৪–২০০০: PSLV, GSLV ও নতুন যুগের সূচনা

১৯৯৪: PSLV (Polar Satellite Launch Vehicle)-এর প্রথম সফল উৎক্ষেপণ। এর মাধ্যমে India স্যাটেলাইট প্রেরণে একটি স্থিতিশীল প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে।

২০০১: GSLV (Geosynchronous Satellite Launch Vehicle) উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ভারত আরও ভারী স্যাটেলাইট পাঠাতে সক্ষম হয়।

২০০৮ – চন্দ্রযান-১ মিশন

২২ অক্টোবর, ২০০৮: ভারত চাঁদের উদ্দেশ্যে তার প্রথম মহাকাশযান চন্দ্রযান-১ পাঠায়। এটি চাঁদের পৃষ্ঠে জল উপস্থিত থাকার প্রমাণ সংগ্রহ করে, যা আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণায় এক যুগান্তকারী তথ্য ছিল।

২০১৩ – মঙ্গলযান (MOM)

৫ নভেম্বর, ২০১৩: ভারতের প্রথম আন্তঃগ্রহ অভিযান ‘মঙ্গলযান’ উৎক্ষেপিত হয়।

২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪: মঙ্গলযান সফলভাবে মঙ্গল গ্রহের কক্ষে প্রবেশ করে, ভারত প্রথমবারেই সফল হওয়া প্রথম দেশ হিসেবে ইতিহাস গড়ে।


২০১৭ – এক উৎক্ষেপণে সর্বাধিক স্যাটেলাইট রেকর্ড

১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭: PSLV-C37 মিশনের মাধ্যমে একসঙ্গে ১০৪টি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে ISRO, যা একটি বিশ্ব রেকর্ড।

২০১৯ – চন্দ্রযান-২

২২ জুলাই, ২০১৯: দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযান ‘চন্দ্রযান-২’ উৎক্ষেপণ করা হয়। যদিও ল্যান্ডার বিক্রম চাঁদের পৃষ্ঠে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়, অরবিটার এখনও কক্ষপথে কাজ করছে।


২০২০ – গগনযান প্রস্তুতি

ভারতের প্রথম মানব মহাকাশ মিশন ‘গগনযান’-এর প্রস্তুতি চলে। এই প্রকল্পে ভারতীয় নভোচারীদের মহাকাশে পাঠানো হবে, যা ISRO-এর মানব মহাকাশ অভিযানে প্রবেশের চিহ্ন।


২০২3 – চন্দ্রযান-৩ ও চাঁদের দক্ষিণ মেরু জয়



২৩ আগস্ট, ২০২৩: চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে। এটি ভারতকে বিশ্বের প্রথম দেশ করে তোলে, যে এই অঞ্চলে সফল অবতরণ করতে পেরেছে।


২০২৫ – আদিত্য-এল১

সূর্যকে পর্যবেক্ষণের জন্য ভারতের প্রথম সৌর অভিযানে ‘আদিত্য এল-১’ উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি Lagrange Point 1-এ পৌঁছে সূর্যের করোনার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করবে।


অন্যান্য উল্লেখযোগ্য সাফল্য

IRNSS/NavIC: ভারতের নিজস্ব ন্যাভিগেশন সিস্টেম

GSAT: যোগাযোগ স্যাটেলাইটের বিকাশ

RISAT, Cartosat: আবহাওয়া, কৃষি ও মানচিত্র ব্যবস্থাপনায় ব্যবহৃত

উপসংহার

ভারতের মহাকাশ গবেষণা আজ শুধুমাত্র উৎক্ষেপণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি এখন অর্থনীতি, জলবায়ু গবেষণা, কৃষি, প্রতিরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে ভারতের লক্ষ্য হল — মহাকাশ পর্যটন, আন্তঃগ্রহ বসতি, এবং বাণিজ্যিক উৎক্ষেপণের মাধ্যমে বিশ্বের একটি শীর্ষস্থানীয় মহাকাশ শক্তি হয়ে ওঠা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন